গণিতের উন্নতির সাথে সাথে সভ্যতার উন্নতি হয়েছে। আমাদের চার পাশের যা কিছু নান্দনিক- এর অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে গাণিতিক যুক্তির সঠিক প্রয়োগ। শৈশবে আমাদের সামনে গণিতকে উপস্থাপন করা হয় ভীতিকর বিষয় হিসেবে। এর প্রভাব থেকে যায় সারা জীবন। ফলে গণিত আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কী কাজে লাগে তা অজানাই থেকে যায়। অথচ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি পর্যায়ে এর ব্যবহার বিদ্যমান। কম্পিউটার, বিমান, বডি স্ক্যানার, সফটওয়্যার, কোডিং আরো অনেক কিছুর ব্যবহারে আমরা গণিতের প্রয়োগ দেখতে পাই। গণিত আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও বিশ্লেষণমূলক দক্ষতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করার সেরা উপায় গণিতচর্চা। দার্শনিক কাস্তের মতে, ‘একটি বিজ্ঞান কেবল তখনই সম্পূর্ণ হয়, যখন এটি গণিত দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত।’ তাই এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না, বৈজ্ঞানিক শিক্ষা, যা গণিত দিয়ে শুরু হয় না বা গণিতের প্রয়োগ নেই; তার ভিত্তি ত্রুটিযুক্ত।
যিনি গণিত সম্পর্কে অজ্ঞ, বিশ্বের অন্য জিনিস সঠিকভাবে জানা তার পক্ষে হয়ে পড়ে কষ্টসাধ্য। গণিত সব বিজ্ঞানকে নিখুঁত করে আধুনিক সভ্যতা গঠনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, মেডিসিন ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিজ্ঞানের ওপর জোর দেয়া হয়। এসব বিজ্ঞান কেবল গণিতের সহায়তায় সামনের দিকে অগ্রসর হয়। সুতরাং বলা যায়, ‘গণিত হলো সব বিজ্ঞানের বিজ্ঞান।’ বর্তমান সময় কম্পিউটারের যুগ। কম্পিউটারের আবিষ্কারক ছিলেন একজন গণিতবিদ। যেকোনো ধরনের গবেষণার ক্ষেত্রে গণিতের প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। গবেষণার ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের বাস্তবভিত্তিক মডেল তৈরি গণিত ছাড়া অসম্ভব। তাই গণিতে দক্ষ হয়ে উঠলে এবং গুরুত্ব সহকারে অধ্যয়ন করলে আমরা বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে আরো অগ্রসর হতে পারব।
খ্যাতনামা জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিদ গ্যালিলিও বলেছিলেন, ‘আমি যদি আবার পড়াশোনা শুরু করতাম তবে আমি প্লেটোর পরামর্শ অনুসরণ করে গণিত দিয়ে শুরু করতাম।’ গণিতের জাদুকরী শক্তি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ও প্রতিটি স্তর করতে পারে সাফল্যমণ্ডিত।