বর্তমানে আমাদের দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে বিভিন্ন রকম শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশল প্রচলিত আছে। দিনে দিনে এ সকল পদ্ধতির পরিবর্তন, পরিমার্জন হচ্ছে। কোনো কাজ করতে গিয়ে আমরা যথাযথ উপায় বা ধাপ অনুসরণ করি৷ কাজ করার জন্য এই যথাযথ উপায় অনুসরণই হচ্ছে পদ্ধতি৷ শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশল মূলত উদ্দেশ্যমূলক কাজ, যা একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়৷ শিখনের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ধারাবাহিক যে প্রক্রিয়া বা কৌশলের মাধ্যমে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকেই শিখন শেখানোর পদ্ধতি বলা হয়
শিখন শেখানো কার্যক্রমের তিনটি প্রধান উপাদান হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু৷ শিখন শেখানো পদ্ধতির কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থী ও তার শেখার বিষয়ের মধ্যে বন্ধন বা যোগাযোগ তৈরির মাধ্যমে আচরণিক উদ্দেশ্য বা শিখনফল অর্জনের চেষ্টা করা৷ অর্থাৎ শিক্ষক নির্দিষ্ট পদ্ধতির ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার বিষয়বস্তুর মধ্যে যোগাযোগ ঘটান ৷
প্রাচীন ও মধ্যযুগের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক ছিলেন শিক্ষা প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু৷ শিক্ষার্থী ছিল গৌণ৷ শিক্ষক বা গুরু যা শেখাতেন, যেভাবে শেখাতেন তা-ই শিক্ষার্থীদের শিখতে হতো অনেকটা বাধ্য হয়ে ৷ সময়ের সাথে এই তিনটি বিষয়ের গুরুত্ব পরিবর্তিত হয়েছে ৷ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীই মুখ্য এবং শিক্ষকের কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থীর কাজের মাধ্যমে শিখনে সাহায্য করা ৷ শিক্ষার্থীর বয়স, অভিজ্ঞতা, রুচি, ও পরিবেশ ইত্যাদির প্রতি লক্ষ রেখে শিক্ষক উপযুক্ত শিখন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করবেন ৷
প্রত্যেকটি পদ্ধতি কয়েকটি ধাপ বা স্তরের সমন্বয় ৷ শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের আগেই তাই শিক্ষক পাঠের উপযুক্ত পদ্ধতি নির্বাচন করে সে অনুযায়ী ধাপে ধাপে অগ্রসর হন ৷ একজন ভালো শিক্ষক কোনো একক পদ্ধতি বা কৌশলের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন না ৷ শিখন শেখানো একটি সৃজনশীল কাজ ৷ যে শিক্ষক যত কৌশলী তাঁর পাঠদান তত চমৎকার ও ফলপ্রসূ ৷
সুপ্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত বেশকিছু শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি চালু রয়েছে। মূলত যে শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশলের মধ্যে শিক্ষার্থী অপেক্ষা শিক্ষকের কর্মতৎপরতা অধিক থাকে তাকেই শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি বলা হয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে এদেরকে সনাতন বা গতানুগতিক পদ্ধতি বলা চলে। যে পাঠদান পদ্ধতিতে শিক্ষকের ভূমিকা মুখ্য এবং শিক্ষার্থীদের ভূমিকা গৌণ সে পদ্ধতিগুলো শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি তুলে ধরা হলো :
১। বক্তৃতা পদ্ধতি
২। প্রদর্শন পদ্ধতি
৩। টিউটোরিয়াল পদ্ধতি
৪। আবৃত্তি পদ্ধতি
৫। সর্দার-পড়ো ব্যবস্থা ইত্যাদি।
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি প্রণয়ন করা হয়। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল শিশুর সক্রিয়তা, কর্মকেন্দ্রিকতা, সামর্থ্য ও আগ্রহকে কাজে লাগানো। কাজেই শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক, আবেগিক সামর্থ্য, আগ্রহ, বুদ্ধি ইত্যাদিকে বিবেচনায় নিয়ে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের মাধ্যমে শিখনফল অর্জনের জন্য যে সকল পদ্ধতি বা কৌশল অবলম্বন করা হয় সে সকল পদ্ধতিগুলোকে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে গঠনবাদ তত্ত্ব অনুসারে শিক্ষার্থীর নিজস্ব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সাথে নতুন জ্ঞানের সংযোগ ঘটানোর সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের সহায়তায় নিজেরাই গভীর চিন্তা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে বিষয়বস্তুর ভেতরে গিয়ে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে। উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পদ্ধতি হলো:
১। আলোচনা পদ্ধতি
২। প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতি
৩। আরোপিত কাজ পদ্ধতি
৪।সেমিনার পদ্ধতি
৫।বিতর্ক পদ্ধতি ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র:
১. ডিপিএড মড্যুল: পেশাগত শিক্ষা: ১ম ও ২য় খন্ড।
২. বি.এড মড্যুল : শিক্ষণ দক্ষতা ও কৌশল।