প্রোগ্রামিং ভাষা এবং এর প্রকারভেদ 

যে ভাষার সাহায্যে একটি যন্ত্রকে নির্দেশনা দিয়ে কোন সমস্যা সমাধান করা যায় তাকে প্রোগ্রামিং ভাষা বলে।অন্যভাবে বলা যায়, কম্পিউটারের মাধ্যমে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহৃত শব্দ, বর্ণ, অংক, চিহ্ন প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত রীতিনীতিকে প্রোগ্রামিং ভাষা বলা হয়। যেমন- BASIC, C, C++, COBOL, Java, FORTRAN, Ada, Pascal ইত্যাদি।

1945 থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যত প্রোগ্রামিং ভাষা আবিষ্কৃত হয়েছে তাদেরকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পাঁচটি প্রজন্মে ভাগ করা হয়েছে।

১। প্রথম প্রজন্ম (১৯৪৫-১৯৪৯ ) Machine Language ( যান্ত্রিক ভাষা)।

২। দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৫০-১৯৫৯ ) Assembly Language (অ্যাসেম্বলি ভাষা) । 

৩। তৃতীয় প্রজন্ম ( ১৯৬০-১৯৬৯ ) High Level Language (উচ্চস্তরের ভাষা)।

৪। চতুর্থ প্রজন্ম ( ১৯৭০-১৯৭৯ ) Very High Level Language (অতি উচ্চস্তরের ভাষা)। 

৫। পঞ্চম প্রজন্ম ( ১৯৮০- বর্তমান ) Natural Language(স্বাভাবিক ভাষা)।  

 কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভাষার পরিচিতি 

সি 

‘সি’ প্রোগ্রামিং ভাষা একটি স্ট্রাকচার্ড বা প্রোসিডিউর প্রোগ্রামিং ভাষা। মিড লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে ‘সি’ অত্যন্ত জনপ্রিয়। “ডেনিশ রিচি” ‘সি’ প্রোগ্রামিং ভাষার জনক। ‘সি’ নামটা এসেছে মার্টিন রিচার্ডস (Martins Richards) এর উদ্ভাবিত বিসিপিএল (BCPL-Basic Combined Programming Language) ভাষা থেকে। BCPL সংক্ষেপে B নামে পরিচিত ছিল। পরে B এর উন্নয়নের ফলে C এর বিকাশ ঘটে।

সি++

১৯৮০ সালে Bjarne Stroustrup বেল ল্যাবরেটরিতে C ভাষার বৈশিষ্ট্যের সাথে অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং এর বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে নতুন এক প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন যা C++ নামে পরিজায়। এই ভাষাকে অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা বলা হয়। এই ভাষার সাহায্যে বিভিন্ন সিস্টেম সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার, ডিভাইস ড্রাইভার ইত্যাদি তৈরি করা যায়।

জাভা 

সান মাইক্রোসিস্টেম কোম্পানি জাভা প্রোগ্রামিং ভাষাটি তৈরি করেন। James Gosling কে জাভা প্রোগ্রামিং ভাষার জনক বলা হয়। এটি একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা। বর্তমান যুগে জাভার জনপ্রিয়তার মূল কারণ হল এই ভাষা ব্যবহার করে লেখা প্রোগ্রাম যেকোন অপারেটিং সিস্টেমে চালানো যায়। এই প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি তৈরি করা যায়।

পাইথন

১৯৯১ সালে Guido Van Rossum পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন। এই ভাষা একই সাথে অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড ও স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রামিং ভাষার বৈশিষ্ট্য সাপোর্ট করে।

ভিজুয়্যাল বেসিক

ভিজুয়্যাল বেসিক একটি ইভেন্ট ড্রাইভেন প্রোগ্রামিং ডিজাইন ভিত্তিক ভাষা। এটি মাইক্রোসফট তৈরি করে। এই ভাষা ব্যবহার করে খুব সহজেই কাস্টমাইজড অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরি করা যায়।

অ্যালগল

অ্যালগল এর পূর্ণনাম Algorithmic Language। এটি ব্যবহৃত হতো মূলত বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে।

ফোরট্রান 

Fortran এর অর্থ Formula Translator যা উচ্চস্তর প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আদিমতম ভাষা। IBM এর গবেষক জন বাকাস IBM মেইনফ্রেম কম্পিউটার এর জন্য এটি তৈরি করেন। এটি গাণিতিক জটিল হিসাব-নিকাশের জন্য এবং প্রকৌশল বিজ্ঞানে গবেষণার কাজে বেশ জনপ্রিয়

ওরাকল

ওরাকল একটি RDBMS(Relational Database Management System) সফটওয়্যার যা ওরাকল কর্পোরেশন তৈরি করে। এটি ডেটাবেজ সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।

মধ্যমস্তরের ভাষাঃ

যে প্রোগ্রামিং ভাষায় নিম্নস্তরের ভাষার সুবিধা যেমন- বিট পর্যায়ের প্রোগ্রামিং বা সিস্টেম সফটওয়্যার  এর মাধ্যমে হার্ডওয়্যার নিয়ন্ত্রণ এবং উচ্চস্তরের ভাষার সুবিধা যেমন- অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরি করা যায় তাকে মধ্যম স্তরের ভাষা বলা হয়। মধ্যম স্তরের ভাষার উদাহরণ হল – C, Forth, Dbase, WordStar ইত্যাদি।

চতুর্থ প্রজন্মের ভাষাঃ

4GL এর পূর্ণরূপ Fourth Generation Language। চতুর্থ প্রজন্মের ভাষাকে অতি উচ্চ স্তরের ভাষা বলা হয়। চতুর্থ প্রজন্মের ভাষা হলো ডেটাবেজ সংক্রান্ত ভাষা। অর্থাৎ এই প্রজন্মের ভাষার সাহায্যে ডেটাবেজ তৈরি, আপডেট, ডিলেট সহ ডেটাবেজ সম্পর্কিত সকল কাজ সম্পাদন করা যায়। এই প্রজন্মের ভাষাকে non-procedural বা Functional Language বলা হয়। কারণ এই প্রজন্মের ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে তথ্যাবলি দরকার কেবল তা বলে দিলেই হয়, কীভাবে কুয়েরি করা যাবে তা বলার দরকার হয় না। এই প্রজন্মের ভাষার উদাহরণ হল  SQL, Oracle ইত্যাদি।

পঞ্চম প্রজন্মের ভাষাঃ

5GLএর পূর্ণরূপ Fifth Generation Language। পঞ্চম প্রজন্মের ভাষাকে স্বাভাবিক ভাষা (Natural Language) ও বলা হয়। Artificial  বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর যন্ত্র তৈরিতে এই প্রজন্মের ভাষা ব্যবহৃত হয়।পঞ্চম প্রজন্মের ভাষায় লেখা প্রোগ্রামকে মেশিন ভাষায় রূপান্তরের জন্য ইন্টেলিজেন্ট কম্পাইলার ব্যবহৃত হয়। এই প্রজন্মের ভাষা ব্যবহার করে মানুষ যন্ত্রকে মৌখিক নির্দেশ দিতে পারে।পঞ্চম প্রজন্মের ভাষার উদাহরণ হচ্ছে PROLOG(PROgramming LOGic), LISP, Mercury ইত্যাদি। 

গ্রোগ্রামিং ভাষায় নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে লার্নটাইমের প্রোগ্রামিং ভাষা শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন । ওয়ান টু ওয়ান পদ্ধতিতে ক্লাস করে সহজে শিখুন প্রোগ্রামিং ভাষা আর একধাপ এগিয়ে রাখুন নিজেকে। 

0 Shares:
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You May Also Like
Read More

পাইথন কেন শিখবেন?

পাইথন ডেভেলপারদের চাহিদাঃ টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাইথন ডেভেলপারদের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলোর প্রতিটি…
Read More

ডিজিটাল বাংলাদেশ 

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকার যে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিল, সেই ঘোষণার আলোকে এরই মধ্যে…
Read More

তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন  

আধুনিক সভ্যতার এই বিশ্বায়নের যুগে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বত্র। শিল্প বিপ্লবের পর তথ্যপ্রযুক্তিতে দ্রুত  উন্নয়ন  লাভ পৃথিবীতে সবচেয়ে…
Read More

ছোটদের জন্য কোডিং ভাষা শেখার ক্ষেত্রে স্ক্র্যাচ কোডিং দিয়ে শুরু করা ভালো 

বাচ্চাদের জন্য কোডিং শেখা শুধুমাত্র ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের প্রস্তুতির জন্যই দরকারী নয়, বরং  যৌক্তিক এবং সৃজনশীল চিন্তার দক্ষতা তৈরির…