পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার নয়টি উপায় 

আমরা যারা পড়াশোনা করি অর্থাৎ শিক্ষার্থী তাদের সিংহভাগ মানুষের একটি সাধারণ সমস্যা হলো পড়াশোনায় মন বসেনা। পড়াশোনায় মন বসানোর কয়েকটি সহজ উপায় আছে। এগুলো অনুসরণ করলে, আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।

১. লক্ষ্য স্থির করা

কেন পড়বেন এর উত্তর নির্ধারণ করে পড়া শুরু করুন। আমাদের বেশিরভাগ মানুষের পড়ায় মন না বসার প্রধান কারণ কেন পড়ছি? এই বিষয়টা তাদের কাছে পরিষ্কার না। আপনি কেন পড়ছেন পড়ালেখা করে আপনি কি হতে চান? এই লক্ষ্য আগে ঠিক করুন। উদ্দেশ্যহীন ভাবে যদি আপনি বল ছুড়েন সেই বল যেমন গোল পোস্টে ঢুকবে না, ঠিক উদ্দেশ্যহীন পড়ালেখায় মন বসবে না এটাই স্বাভাবিক।

২. টেবিলে বসার অভ্যাস করা

টেবিলে বসার অভ্যাস করুন, পড়ায় মন না বসুক তারপরও বসে থাকেন। এভাবে বসে থাকতে থাকতে এক সময় পড়ায় মন বসবে।

অনেকে বিছানায় কিংবা শুয়ে শুয়ে পড়েন, এটা একেবারে বাদ দিতে হবে এতে কিছুক্ষণ পড়ার পর ঘুমের ভাব আসে এবং পড়া ঐখানেই শেষ হয়ে যায়। তাই টেবিলে পড়ার অভ্যাস করতে হবে। টেবিলে পড়তে বসায় সময় পড়ার সব জিনিস নিয়ে পড়তে বসবেন। পড়ার সময় মনে পড়ল, আরে আমি তো কলম নেয়নি বা খাতা নেয়নি এতে বারবার টেবিল থেকে উঠার দ্বারা পড়ায় মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে।

৩. রুটিন করে পড়া

রুটিন আপনার সমস্ত বিষয়গুলোর মাঝে একটি ব্যালেন্স ঠিক রাখবে। রুটিন করে পড়া পড়াশোনায় মনোযোগিতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে বলে থাকেন একদিন পড়লে অন্য দিন আর পড়তে মন চায় না বা কি পড়ব তা ভেবে পান না। এর জন্য রুটিন করা একান্ত প্রয়োজন গবেষণায় দেখা গেছে, রুটিন-বিহীন মানুষ সফলতার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। রুটিন ছাড়া পৃথিবীর কোন কিছুই হয় না যেমন, রুটিন মাফিক সূর্য প্রতিদিন পূর্ব দিক থেকে উঠে এবং পশ্চিমে অস্ত যায়। প্রতিদিন দিন হয় এবং দিন শেষে রাত নেমে আসে। সব যেখানে রুটিন মাফিক হচ্ছে আপনাকেও পড়াশোনা রুটিন করে করতে হবে।

এখন অনেকে জানতে চান রুটিন কিভাবে করব? তাদেরকে বলব আপনার যেভাবে সুবিধা হয়, আপনি আপনার মন মত আপনার রুটিন কে সাজান। অবশ্যই পড়ার মাঝে অল্প সময় বিরতি দিবেন। কারণ, মানুষের ব্রেইন ৪০ মিনিট এর বেশি মনোযোগ রাখতে পারে না। তাই, বিরতি দিয়ে দিয়ে পড়লে পড়াটা খুব ভালো হয়।

৪. মিশন নিয়ে পড়া

যে গেমসগুলোতে লেভেল বা মিশন থাকে ওই গেমসগুলা খেলতে খুব মজা লাগে । ১ লেভেল থেকে অন্য লেভেলে, এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায়। কোন বিরক্তি আসে না। ঠিক পড়াশোনাকেও যদি আমি গেমস এর মত বানাতে পারি তাহলে, অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারব।

৫. যখন মনোযোগ বসে তখন পড়া

এক গবেষণায় দেখাগেছে পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের আচার, আচরণ, মন একেক রকম। তাই যে সময় আপনার বেশি মনোযোগ থাকে আপনি সেই সময় পড়েন এতে কোন সমস্যা নাই। এখন যদি বলেন, আমার কোন সময়ই পড়ায় মন বসে না, তাহলে বলব, আপনি পড়ার জন্য গভীর রাত কিংবা সকালকে বেছে নিতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, নীরব নিস্তব্ধ অবস্থায় পড়ায় অধিক মনোযোগ থাকে।

৬. ব্যায়াম বা খেলাধুলা করা

এটা পরীক্ষিত যে ব্যায়াম বা খেলাধুলা পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে । সারাদিনে একটা সময় অনতত ১ ঘণ্টা ব্যায়াম অথবা খেলাধুলা করা উচিৎ  এতে মাইন্ড প্রেস থাকে এবং পড়াশোনায় অধিক মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। আর খেলাধুলা অথবা ব্যায়াম এর জন্য আপনি বিকেলকে নির্ধারণ করতে পারেন। কারণ, বিকেল বেলা পড়াশোনা না করা উত্তম।

৭. পর্যাপ্ত ঘুম

একজন স্বাভাবিক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু অনেকে সারারাত জেগে Facebook চালিয়ে কিংবা Youtube এ ভিডিও দেখে কাটান এতে করে আপনার ঠিকমত ঘুম হয় না। ফলে আপনার ব্রেইন শান্ত হয় না আর এর প্রভাব আপনার পড়াশোনাও পরে। ফলে, আপনার পড়তে বিরক্ত লাগে। 

ব্রেইনকে ঠাণ্ডা করতে রাতের ঘুম বেশি কার্যকর দিনের ঘুমের চাইতে। আপনার মাথা যদি ঠাণ্ডা না থাকে তাহলে আপনি কোন কাজই ঠিকভাবে করতে পারবেন না। অতএব পর্যাপ্ত ঘুম পড়াশোনায় মনোযোগ আনার অন্যতম উপায়।

৮. এক সাথে একাধিক কাজ করা থেকে বিরত থাকা

আমরা পড়তে বসলে একসাথে অনেক কাজ করার চেষ্টা করি এতে কোনটাই ঠিকভাবে হয় না শুধু সময় নষ্ট হয়।আমরা অনেকই মোবাইল/কম্পিউটার/ টিভির সামনে পড়তে বসি এতে না হয় পড়া না হয় ঐগুলো দেখা।

তাই পড়ার সময় মোবাইল, কম্পিউটার, টিভি একেবারে বন্ধ করে পড়তে বসেন বা যে জায়গায় এগুলা আছে সে জায়গা ত্যাগ করে অন্য জায়গায় পড়তে বসেন এতে পড়ার মনোযোগের পাশাপাশি পড়া তাড়াতাড়ি মুখস্থ হবে।

৯. খাবারের প্রতি সচেতন হন

আমরা হয়ত অনেকে জানিনা পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার পেছনে খাবার দারুণ ভূমিকা পালন করে । অনেকে ভাবতে পারেন দামি খাবার খেলে যেমন: ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খেলে মনে হয় বেশি মনোযোগ আসে। আসলে ধারনাটি একেবারেই ভুল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার সর্বদাই পরিত্যাগ করা উচিত। তাহলে কি খাবেন?

ছোটবেলায় সবাই শুনেছেন, মিষ্টি খেলে ব্রেইন বাড়ে। আসলেই , মিষ্টি জাতীয় খাবার ব্রেইনকে সতেজ এবং সুস্থ রাখে তাই মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পারেন, আর অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং সবুজ শাক- সবজি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন। এতে আপনার শরীর সুস্থ ও মন ভালো থাকবে এবং পড়াশোনায় মন বসবে। তাছাড়া মধু ও ডিম খেতে পারেন এগুলোও খুব উপকারী । 

0 Shares:
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You May Also Like
Read More

ছোটদের জন্য কোডিং ভাষা শেখার ক্ষেত্রে স্ক্র্যাচ কোডিং দিয়ে শুরু করা ভালো 

বাচ্চাদের জন্য কোডিং শেখা শুধুমাত্র ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের প্রস্তুতির জন্যই দরকারী নয়, বরং  যৌক্তিক এবং সৃজনশীল চিন্তার দক্ষতা তৈরির…
Read More

বাচ্চাকে জিনিয়াস হিসাবে গড়ে তোলার কৌশল 

‘প্র্যাকটিস মেকস এ ম্যান পারফেক্ট’ অর্থাৎ চর্চার মাধ্যমে, পরিশ্রমের মাধ্যমেই শুধু চূড়ান্ত সাফল্য বা দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব…